জলসাঘর (সত্যজিৎ রায় ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়)

350.00

Hardback ISBN- 9788194263524
164 Pages including 32 pages art plate

follow Us

‘জলসাঘর’ ছবির শুটিং যখন নিমতিতায় হয়, তখন আমরা ওখানকার চৌধুরী পরিবারের জমিদার বাড়িতে থাকি।

বাবার খুব পছন্দের ছবি হলেও, ‘জলসাঘর’ ভালো ব্যবসা করেনি। কিন্তু ভারতীয় রাগ সংগীতের দিক থেকে সে ছবি এক ঐতিহাসিক দলিল । বিলায়েৎ খাঁ-এর কম্পোজ করা অসামান্য আবহসংগীত, বেগম আখতার, সালামত খাঁ, বিসমিল্লা খাঁ, ওয়াহেত খাঁ, লড্ডন খাঁ, রোশন কুমারীর মন-মাতানো পারফরমেন্স – যেন এক চাঁদের হাট। দেশে না চললেও, ‘জলসাঘর’ বিদেশে, বিশেষ করে ফ্রান্সে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। আর সে-ছবির ভিডিও ক্যাসেট, পরে ডিভিডি ও অডিও সিডি প্রথম ফ্রান্স থেকেই বের হয় । এখনও কোনও ফিল্ম পাগল ফরাসী ট্যুরিস্ট কলকাতায় এলে নিমতিতায় ছুটে যান ‘জলসাঘর’-এর বাড়িটি দেখতে। কিন্তু তার জরাজীর্ণ অবস্থা এবং সেখানে চলচ্চিত্রের জলসাঘরটি খুঁজে না পেয়ে মর্মাহত হয়ে আমাদের বাড়িতে হানা দেন। যখন বলি যে সেই ঘরটি কলকাতার অরোরা স্টুডিওতে বাবার শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত-র বানানো একটি সেট, তখন তাঁরা আকাশ থেকে পড়েন। এই বইতে মূল গল্প ও চিত্রনাট্য—দুই-ই থাকছে। এ ছাড়াও বাবার শুটিং স্ক্রিপ্ট, অর্থাৎ খেরোর খাতার কিছু পাতা, শুটিং-এর ছবি, প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার, পোস্টার, হোর্ডিং, বুকলেট ও সব শেষে কাগজে বেরোন বাছাই করা কিছু সমালোচনাও স্থান পেয়েছে।

সন্দীপ রায়

 

সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)

৪০এর দশকের গোড়ায় তাঁর দুটি ইংরেজি গল্প বেরোয় “অমৃতবাজার পত্রিকা”য় । বাংলায় তাঁর প্রথম প্রবন্ধ লেখেন ১৯৪৯এ, সে বছর প্রকাশিত “চলচ্চিত্র” বার্ষিকীতে । ১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় “পথের পাঁচালী”, ও ছবিটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে । পরবর্তী চার দশক ধরে তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মান অর্জন করে,যেমন অপরাজিত, মহানগর, চারুলতা, আগন্তুক । তিনি প্রথম ভারতীয় যিনি সাম্মানিক অস্কার অর্জন করেন । তার পর ফিল্ম নিয়ে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ লেখেন । ১৯৬১র মে মাস থেকে “সন্দেশ” বেরোয়, সম্পাদক ছিলেন সত্যজিৎ রায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়, পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই প্রকাশ হয় সত্যজিতের করা লিয়ারের ছড়ার অনুবাদ । সে বছরই শারদীয়া থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম শঙ্কু উপন্যাস। ১৯৬২র গোড়াতে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম মৌলিক বাংলা গল্প “বঙ্কউবাবুর বন্ধু” । ১৯৬৫র ডিসেম্বর থেকে আসে জনপ্রিয় ফেলুদা । ১৯৬০এর মাঝামাঝি প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই “প্রফেসর শঙ্কু”, ৬০এর শেষদিকে তাঁর “এক ডজন গপ্পো”, আর কয়েক মাস পরে ফেলুদা উপন্যাস “বাদশাহী আংটি” । এর পর থেকে ওঁর লেখা ও বই নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে । ১৯৮১তে প্রকাশিত হয় ওঁর আত্মজীবনী । ১৯৮২তে তিনি সৃষ্টি করেন আরেকটি নতুন দারাবাহিক চরিত্র তারিণীখুড়ো । ওঁর প্রায় সব গল্পে ও বইতে আছে ওঁর নিজস্ব অলঙ্করণ, “সন্দেশ” পত্রিকাতেও তিনি অসংখ্য অলঙ্করণ করেন ও প্রচ্ছদ আঁকেন ।

 

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় [১৮৯৮-১৯৭১]

কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু করলেও পরে হন শ্রেষ্ঠ বাঙালী ঔপনাসিক । প্রথম উপন্যাস “চৈতালী ঘূর্ণি” ও শেষ উপন্যাস ‘শতাব্দীর মৃত্যু । অন্যান্য নামী উপন্যাস ‘গণদেবতা’, ‘কবি’, ‘অরোগ্য নিকেতন’, ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’, ইতাদি । বেশ কিছু উৎকৃষ্ট ছোট গল্প লিখেছেন–’জলসাঘর’, ‘অগ্রদানী’,’তারিনী মাঝি’, ‘বেদেনী’, ইত্যাদি । তাঁর বহু গল্প ও উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয় । বেশ কিছু ভালো গানও লিখেছেন, শেষের দিকে ছবি আঁকতেন, ভাস্কর্যও করতেন । তিনি প্রথম বাঙালী জিনি জ্ঞানপীঠ সম্মান ও আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন ।